তালাকের সংখ্যা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্য
প্রশ্ন : আমাদের গ্রামের একটি ঘটনা: এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। স্বামীর বক্তব্য হলো সে তার স্ত্রীকে “এক তালাক, দুই তালাক” বলেছে। এরপর তার মা তার মুখ চেপে ধরায় আর কিছু বলেনি। ছেলের মাও এ কথাই বলছে। কিন্তু স্ত্রী বলছে স্বামী তাকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলেছে। স্বামীর খালাতো বোন এবং আরো একজন মহিলাও বলছে যে, স্বামী তিন তালাক দিয়েছে। এমতাবস্থায় স্ত্রীর উপর কত তালাক পতিত হবে এবং স্বামী তার উক্ত স্ত্রীকে নিয়ে শরীয়ত সম্মতভাবে ঘর- সংসার করতে পারবে কিনা?
উত্তর : স্বামীর বক্তব্য অনুযায়ী সে তার স্ত্রীকে দুই তালাক দেওয়ার পরে আর কিছু বলেনি এবং তৃতীয় তালাককে অস্বীকার করছে। এর বিপরীতে স্ত্রীর তৃতীয় তালাকের দাবীর পক্ষে পর্যাপ্ত স্বাক্ষী উপস্থিত নেই। তাই বিচারিক দৃষ্টিতে স্বামীর কথাই ধর্তব্য হব্যে। তবে স্ত্রী যদি তৃতীয় তালাক দেওয়ার কথা নিশ্চিতভাবে শুনে থাকে, তাহলে স্ত্রীর জন্য আবশ্যক হল- খুলা ইত্যাদি বৈধ পদ্ধতি অবলম্বন করে বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
প্রমাণপঞ্জি
(1)
سنن الترمذي لمحمد بن عيسى بن سورة أبي عيسى الترمذي المتوفى سنة 379هـ، (دار ابن الجوزى) رقم الحديث : 1341، حدثنا علي بن حجر أنبأنا على بن مسهر وغيره عن محمد بن عبيد الله عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن النبى صلى الله عليه وسلم قال في خطبته البينة على المدعى واليمين على المدعى عليه
(2)
النتف في الفتاوى لشيخ الإسلام قاضي القضاة أبي الحسن على بن الحسين بن محمد السغدي المتوفى سنة 461هـ (ايج ايم سعيد كمبني ادب منزل باكستان جوك كراتشي) صـ 390، والحادي عشر : شهادة المرأة لا تجوز بغير الرجال إلا فيما لا يطلع عليه الرجال
(3) كتاب المبسوط 6/173 (4) رد المحتار على الدر المختار 8/202
(5) الفتاوى الهندية 1/354-355
* আল মাবসূত: ৬/১৭৩ * ফতোয়া শামী: ৮/২০২ * ফাতোয়া আলমগীরী: ১/৩৫৪-৩৫৫
* ফাতাওয়া মাহমুদিয়া পৃ: ১৯/২৩৭, * ফাতাওয়া হক্কানিয়া পৃ: ৪/৪৫৬ *কিতাবুন নাওয়াযিল পৃ: ৯/১৪৬, ।*ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ পৃ: ৯/১৯৩
প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় একটি পরিবারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর তা হলো স্ত্রী দাবী করে স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়েছে, আর স্বামী দাবি করে সে এক তালাক দিয়েছে। বিষয়টা সমাধানের জন্য একটি গ্রাম্য সালিশ বসানো হয়। আর সেই সালিশের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়া হয়। তা হলো-
১। ছেলের দাবী হলো – গত কয়েক মাস আগে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয় এক পর্যায়ে স্বামী তার স্ত্রীকে ফোনে এক তালাক বলে ফেলে। অতঃপর উভয় পরিবারের সম্মতিতে ঘর-সংসার হয়। কিছুদিন পর পুণরায় ঝগড়া হলে স্বামী বলে- তুমি সাফ সাফাই হইয়া আসছ কিনা?
২। মেয়ে পক্ষ, মেয়ের দাবী হলো- গত চার বৎসর পূর্বে ছেলের বাড়ীতে স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়, অতপর স্বামী স্ত্রীকে এক তালাক, এক তালাক দুইবার বলে তালাক দেয়। অতপর তাদের মাঝে ঘর-সংসার হয়। গত চার অথবা পাঁচ মাস পূর্বে আবার বিদেশে থাকাবস্থায় ফোনে আরেকবার তালাক প্রদান করে। স্ত্রীর দাবী অনুযায়ী মোট তিন তালাক হয়ে গেছে। আর ২ তালাকের সময় ছেলের মা ও ছেলের চাচাতো বোন সাথে ছিলো মেয়ের দাবী। আর তাদের দুইজন ছেলে আছে।
জানার বিষয় হলো, স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘর-সংসার করতে পারবে কিনা? জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর : প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী স্বামী যদি এক তালাকের ব্যাপারে হলফ করে, তাহলে এক তালাকই ধর্তব্য হবে। শরয়ী স্বাক্ষী ছাড়া স্ত্রীর কথা গ্রহণযোগ্য হবে না। এমতাবস্থায় স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে স্বামী বিবাহ ছাড়াই তাকে রুজআত করে ঘর-সংসার করতে পারবে। আর ইদ্দত অতিবাহিত হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে পুনরায় বিবাহ হতে হবে। বিবাহের পূর্বে ঘর-সংসার করা বৈধ হবে না।
কিন্তু যদি স্ত্রীর দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, স্বামী তাকে তিন তালাক দিয়েছে, তাহলে তার জন্য এ স্বামী থেকে খোলা-তালাক ইত্যাদির মাধ্যমে নিস্কৃতি নিয়ে নেওয়া জরুরি। তার সাথে ঘর-সংসার করা জায়েয নয়। এমতাবস্থায় ইদ্দত অতিবাহিত হয়ে গেলে স্ত্রীর জন্য দ্বিতীয় বিবাহে সম্মত হওয়া জায়েয নয়।
প্রমাণপঞ্জি
(1)
الفتاوى الشامية لابن عابدين المتوفى سنة ১২৫২هـ، كتاب الشهادة ৪/৪৪৯ (المكتبة التهاونية) المرأة كالقاضي اذا سمعته او اخبرها عدل لا يحل لها أن تمكنه. كذا في بحر الرائق ৩/২৫৭.
(2) فتاوى عثماني مفتي تقي عثماني ، كتاب الطلاق ২/৩৫৪-৩৫৫
(3) فتاوى محمودية : ১৯/২৪৬ (4) فتاوى رحيمية : ৮/২৬৮
(5) امداد المفتين : ২/৫৯৫