দুআর গুরুত্ব ও ফজিলত

দুআর গুরুত্ব ও ফজিলত

الحمد الله الذي هدانا لهذا وما كنا لنهتدى لولا أن هدانا الله، وصلى الله على سيدنا ومولانا محمدا عبده ورسوله. أما بعد

বর্তমান সময়ে মুসলমানদের বিপদ-আপদ ও বালা-মসিবতের একটি বড় কারণ হলো, সদা-সর্বদা দুআর এহতেমাম না করবে । বিপদে পড়লে জায়েয-নাজায়েয সকল প্রকার তদবীরের পিছনে তো দৌড়ায়, কিন্তুু কখনো মনে হয় না যে,কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে একটু দুআ করে নেই। আবার কখনো দুআর দিকে মুতাওয়াজ্জুহ হলেও দুআর আদাবের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না।
দুআ মুমিন বান্দার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দুনিয়া ও আখেরাতে সকল আশা-আকাঙ্খা পূরণ হওয়া, সব ধরণের কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করবে এবং সর্ব প্রকার বালা-মসিবত ও অকল্যাণ থেকে নিরাপদ থাকার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে দুআ। বান্দা যখন আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহর কাছে দুআ করে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন এবং তার দুআ কবুল করেন। তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। তার গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

অর্থ: তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমার কাছে দুআ করো আমি তোমাদের দুআ কবুল করবো। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকবে (অর্থাৎ আমার কাছে দুআ করবে র ব্যাপারে অহংকার করবে) তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মুমিন, আয়াত: ৬০)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-

وَإِذَاسَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَالدَّاعِ إِذَادَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوالِي وَلْيُؤْمِنُوابِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

অর্থ: যখন আপনার কাছে আমার বান্দারা আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে তখন তাদেরকে বলুন, নিশ্চয় আমি তাদের নিকটে আছি। দুআকারী যখন আমার কাছে দুআ করে তখন আমি তার দুআ কবুল করি। সুতরাং তারাও (আমার বান্দারাও) যেন আমার কথায় সাড়া দেয়। আমার আদেশ-নিষেধ মেনে নেয়। আমার প্রতি ঈমান রাখে, তাহলে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হবে। (সূরা বাকারা: ১৮৬)

নিচে এ সম্পর্কে কিছু হাদীস পেশ করা হলো:

(১) হযরত নু‘মান ইবনে বাশির রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-

“‏الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‏”‏.‏ ثُمَّ قَرَأَ ‏(‏وقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ )‏ قَالَ أَبُو عِيسَى‏.‏ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

অর্থ: দুআ হল একটি ইবাদত। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন,

وقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

অর্থ: তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ হয়, নিশ্চিত তারা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে যাবে।
(সূরা মুমনি ৬০), সুনানে তিরমিযী, ৩৩৭২; মুসতাদরাকে হাকেম, ১৮৩৮; শুআ‘বুল ঈমান, ১১০৫
(২) হযরত আনাস ইবনে মালেক রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ 

অর্থ: দুআ হচ্ছে ইবাদতের মগজ বা মূল।
সুনানে তিরমিযী, ৩৩৭১; আল-মু‘জামুল আওসাত, ৩২২
(৩) হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ تَعَالَى مِنَ الدُّعَاءِ‏.‏
مسند أحمد بن حنبل- تعليق شعيب الأرنؤوط : إسناده قابل للتحسين

অর্থ: আল্লাহর নিকট দুআর চেয়ে অধিক প্রিয় ও মর্যাদাপূর্ণ কোনো জিনিস নেই।
-সুনানে তিরমিযী, ৩৩৭০; আল আদাবুল মুফরাদ, ৭১২; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৮২৯; মুসতাদরাকে হাকেম, ১৮৩৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, ৮৭০; শুআ‘বুল ঈমান, ১১০৬

(৪) হযরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ‏‏.‏ قَالَ وَرَوَى وَكِيعٌ وَغَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ هَذَا الْحَدِيثَ وَلاَ نَعْرِفُهُ

إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَأَبُو الْمَلِيحِ اسْمُهُ صَبِيحٌ سَمِعْتُ مُحَمَّدًا يَقُولُهُ وَقَالَ يُقَالُ لَهُ الْفَارِسِيُّ ‏

অর্থ: যে আল্লাহর কাছে চায়না আল্লাহ্ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।
-সুনানে তিরমিযী, ৩৩৭৩; আল-আদাবুল মুফরাদ, ৬৫৮; মুসতাদরাকে হাকেম, ১৮৪৩; মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৬৬৫৫; মুসনাদে আহমদ, ৯৬০১
কবি বলেন-

لَاْتَسْئَلَنَّ بُنَيَّ آدَمَ حَاْجَةً وَسَلِ الَّذَيْ أَبْوَاْبُه لَاْ تَحْجُبُ اللهُ يَغْضَبُ إِنْ تَرَكْتَ سُؤالَه وَبُنَيَّ آدَمَ حِيْنَ يُسْأَلُ يَغْضَبُ

অর্থ: হে আদম সন্তান! মানুষের কাছে চেয়ো না। তাঁর কাছে চাও যার দরজা কখনো বন্ধ হয় না। না চাইলে আল্লাহ রাগান্বিত হন। আর মানুষের কাছে চাইলে সে রেগে যায়।
(৫) হযরত আলী রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

الدُّعَاءُسِلَاحُ الْمُؤْمِنِ،وَعِمَادُ الدِّينِ،وَنُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.
قال الحاكم في المستدرك ,هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه

অর্থ: দুআ মুমিনের অস্ত্র, দ্বীনের স্তম্ভ, আসমান ও যমীনের নূর।
-মুসতাদরাকে হাকেম, ১৮৪৮; মুসনাদে আবি ইয়ালা, ৪৩৯
(৬) হযরত ছাওবান রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

لاَ يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلاَّ الدُّعَاءُ ولاَ يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلاَّ الْبِرُّ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ.
المستدرك للحاكم .هذاحديث صحيح الإسناد ولم يخرجاه . ووافقه الذهبي في التلخيص-صحيح

অর্থ: দুআই কেবলমাত্র তকদীরকে পরিবর্তন করতে পারে। আর নেক কাজই একমাত্র হায়াতকে বৃদ্ধি করতে পারে। নিশ্চয়ই মানুষ তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয় তার কৃত গোনাহের কারণে।
-মুসনাদে আহমদ, ২২৩৮৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, ১৮৫১; তাবারানী আল মু‘জামুল কাবীর, ১৪২৫; সুনানে তিরমিযী, ২১৩৯; শুআ‘বুল ঈমান, ১০২৩৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২৯৮৬৭; ইবনে মাজাহ, ৪০২২; ইবনে হিব্বান, ১০৯০
এবং নিন্দিত জিনিস প্রতিরোধ করে কাঙ্খিত জিনিস লাভের জন্য দুআ হলো অন্যতম একটি শক্তিশালী উপায়। দুআ বালা-মসিবতের শত্রু এবং বিপদ প্রতিরোধক ও উপশম করে। আর বালা-মসিবত একান্ত এসে গেলে, দুআ সেটিকে সহজ করে দেয়।
(৭) হযরত ইবনে ওমর রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ فُتِحَ لَهُ مِنْكُمْ بَابُ الدُّعَاءِ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ وَمَا سُئِلَ اللَّهُ شَيْئًا يَعْنِي أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ أَنْ يُسْأَلَ الْعَافِيَةَ ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ فَعَلَيْكُمْ عِبَادَ اللَّهِ بِالدُّعَاءِ

অর্থ: যার জন্য দুআর দরজা খুলে দেওয়া হল, তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হল। আল্লাহ তা’য়ালার নিকট যা কিছু চাওয়া হয়, তার মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করবে তাঁর নিকট বেশি প্রিয়। যে মসিবত এসে গিয়েছে, আর যা এখনো আসেনি-উভটির ক্ষেত্রেই দুআ অত্যন্ত উপকারী, সুতরাং আল্লাহর বান্দারা! তোমরা দুআকে আকড়ে ধরো।
-সুনানে তিরমিযী, ৩৫৪৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ২৯৭৭৮; মুস্তাদরাকে হাকেম, ১৮৬৯
(৮) হযরত সালমান রাযিআল্লাহু আনহু বলেন,

إِنَّ اللهَ يَسْتَحْيِ أَن يَبْسُطَ الْعَبْدُإِلَيْهِ يَدَيْهِ فِيْهِمَا خَيْرًا فَيَرُدَّهُمَا خَائِبَتَيْنِ
المستدرك للحاكم هذا إسناد صحيح على شرط الشيخين .وافقه الذهبي في التلخيص

অর্থ: বান্দা যখন আল্লাহ তাআলার নিকট দুই হাত প্রসারিত করে দুআ করে, তখন আল্লাহ তাআলা তার হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।
-মুস্তাদরাকে হাকেম, ৮৬৬; মুসনাদে আহমদ, ২৩৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আব্দির রাযযাক, ১৯৬৪৮; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, ৩০১৭১; সুনানে আবু দাউদ, ১৪৮৮; সুনানে তিরমিযী, ২৫৫৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৮৬৫
প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা আমরা দুআর গুরুত্ব ও ফজিলত বুঝতে পেরেছি। তাই ছোট-বড় সকল বিষয়ে রবের দরবারে বেশি বেশি দুআ করবে চাই।

সোশ্যাল মিডিয়া

Facebook
Telegram
WhatsApp
Email

সংবাদ