ভয় দেখিয়ে সংখ্যালঘুদের জমি কিনে নেন বেনজীর আহমেদ

  • গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে বেনজীর পরিবার কিনেছে ৫৯৮ বিঘা জমি।

    আইজিপি ও র‍্যাবের মহাপরিচালক থাকার সময় জমি কেনা হয়।

    বেনজীর আহমেদ দেশে নেই, ৪ মে তিনি সিঙ্গাপুরে যান।

  • পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে প্রায় ৬০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এসব জমির প্রায় সবই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাঁরা বলছেন, জমি বিক্রি ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় ছিল না। ভয় দেখিয়ে, জোর করে এবং নানা কৌশলে তাঁদের কাছ থেকে জমিগুলো কেনা হয়েছে।

    গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে গিয়ে জমি বিক্রি করা হিন্দু পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জমি কিনতে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োজিত রেখেছিলেন বেনজীর আহমেদ। বেনজীর পরিবারের রিসোর্টের নির্মাণকাজের তদারক করতেন পুলিশ ও র‍্যাবের কিছু সদস্য। তাঁদের দিয়ে তরমুজ চাষসহ কৃষিকাজও করানো হয়েছে। মাঠপর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে স্বীকারও করেছেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দিলে কিছু করার থাকে না।
    বেনজীর আহমেদ এসব জমি কেনা ও রিসোর্ট গড়ার কাজটি করেছেন আইজিপি (২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর) ও র‍্যাবের মহাপরিচালক থাকার সময়ে (২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল)।

    জমি বিক্রেতাদের একজন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বড়খোলা গ্রামের সরস্বতী রায়ের (৬২) কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি কেন জমি বিক্রি করেছেন? প্রশ্ন শুনেই বিলাপ শুরু করেন সরস্বতী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কত কষ্ট হইরা, সুদে টাহা নিয়া জমিটুক (৩১ শতাংশ) কিনছিলাম। হেই জমিটুক দিয়া আসা নাগছে।’ জমি কে নিয়েছে? সরস্বতী বলেন, ‘বেনজীর নিছে।’ বেনজীর কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বড় পুলিশ’ বলে শুনেছেন।
    ‘রাজি না হলে জমি যাবে, টাকাও পাবেন না’
    দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়ের নামে এখন পর্যন্ত ৬২১ বিঘা জমির খোঁজ পাওয়া গেছে, যার ৫৯৮ বিঘা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। উপজেলা দুটি পাশাপাশি। আর বেনজীর পরিবারের জমিও দুই উপজেলার সীমান্তঘেঁষা এলাকায়। ওই এলাকার গ্রামগুলো হিন্দু অধ্যুষিত।

    বেনজীর আহমেদ সেখানে সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক নামে একটি রিসোর্ট করেছেন। এই রিসোর্টে মানুষকে থাকার জন্য কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। ১০০ টাকা দিয়ে প্রবেশ করে ঘুরেও দেখা যায়। রিসোর্টটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভেতরে খামার, নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা, শিশুদের খেলার জায়গা ও হেলিপ্যাডসহ নানা স্থাপনা রয়েছে।
    রিসোর্টটি পড়েছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বৈরাগীরটোলায়। ওই গ্রাম ও পাশের ডোমরাশুর গ্রামে গত মঙ্গলবার গিয়ে জমি বিক্রেতা পরিবারগুলোর ২৭ সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনই বলেছেন, তাঁরা জমি বিক্রি করতে চাননি, বাধ্য করা হয়েছে। তাঁদের ভয় দেখিয়েছেন পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম।
    নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈরাগীরটোলা গ্রামের এক জমি বিক্রেতা বলেন, তাঁর তিন বিঘা পৈতৃক সম্পত্তি জমি কিনে নিয়েছে বেনজীরের পরিবার। তিনি বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা তৈমুর ইসলাম বেনজীরের পক্ষে জমির মালিকদের কাছে যেতেন। গিয়ে বলতেন, ‘আমি ভালো অফিসার (কর্মকর্তা), তাই আপনাদের কিছু টাকা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। যদি বিক্রি করতে রাজি না থাকেন, তবে জমিও যাবে, টাকাও পাবেন না।’

    সাভানা ইকো রিসোর্টের কাছে একটি চায়ের দোকানে পাওয়া যায় বৈরাগীরটোলা গ্রামের তরুণ সঞ্জয় বলকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরিবারের ৩০ বিঘার বেশি জমি জোর করে কিনে নিয়েছেন বেনজীর। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যখন এই জমি বেচাকেনা হয়, তখন বেনজীর র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।

    সোস্যাল নেটওয়ার্ক

    সর্বশেষ সংবাদ
    সর্বাধিক পঠিত