প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৩, ২০২৫, ৩:০৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ৪, ২০২৪, ১:০৪ অপরাহ্ণ
আবারও জোরালো হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন তাঁতীবাজার মোড়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন।এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নিচ্ছেন। দিন দিন জোরালো হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলন।
গতকাল বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ভিসি চত্বর, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে, হাইকোর্টের সামনে দিয়ে মত্স্য ভবন মোড় হয়ে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন তাঁরা।
প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট শাহবাগ মোড় অবরোধ রাখার পর বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। এ সময় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নতুন কর্মসূচি হলো আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে কোটা বাতিল বিষয়ক পরিপত্র বাতিল নিয়ে শুনানির রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করা। যদি কোটা বাতিল করা হয়, তাহলে স্বাগত জানিয়ে মিছিল, আর যদি কোটা পুনর্বহাল রাখা হয়, তাহলে আরো কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা৷আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
দাবিগুলো ঘোষণা করার সময় বলা হয়, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল করে পরে এটি নিয়ে আবার যেন কিছু না হয়, এ জন্য এটিকে আইনসভার মাধ্যমে আইনে পরিণত করতে হবে৷ শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে নয়, সব চাকরিতে অযৌক্তিক ও ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে যাদের জন্য প্রকৃতপক্ষে কোটা দরকার, তাদের কোটার আওতায় রাখা হোক।আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমরা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলি। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু যারা শুধু সুযোগ-সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়েছে, তারা সবাই ভুয়া। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের সর্বোচ্চ আসনে রাখতে চাই।
যদি প্রয়োজন হয়, তাঁদের সম্মানি ভাতা আরো বাড়ান। দরকার হলে আলাদা হাসপাতাল বানান। কিন্তু এই যে চাকরিতে নাতি-পুতির জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর, সেটি আমরা চাই না৷ এটি স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সবচেয়ে বড় অন্যায়।’কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে তাঁতীবাজার মোড়ে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই অবরোধ বিকেল ৪টা ২০ মিনিট পর্যন্ত চলে। এ সময় গুলিস্তান থেকে বাবুবাজার, সদরঘাট ও যাত্রাবাড়ীগামী সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলে অংশ নেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে মেহেরুন্নেসা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাংলাদেশ তথা বিশ্বে নারীরা পিছিয়ে নেই। সব স্থানে নারীরা এগিয়ে। আমাদের ৬০ শতাংশ কোটার প্রয়োজন নেই। নারী কোটাসহ অন্যান্য সব বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
জবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসীম উদদীন বলেন, ‘আন্দোলনে যত দিন দাবি আদায় না হবে, আমরা ঘরে ফিরব না। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এ আন্দোলন অবশ্যই সফল হবে।’
Copyright © 2025 Online News Portal. All rights reserved.