Search
Close this search box.

ডিজিটাল ব্যংক লাইসেন্স পাবে সর্বোচ্চ ২০ প্রতিষ্ঠান

১৫ দিনেও আবেদন করেনি কেউ

বর্তমানে দেশে প্রচলিত ধারার ব্যাংক আছে ৬১টি।  পাশাপাশি ব্যাংকভিত্তিক মডেলে যাত্রা শুরু করা এ খাতে রয়েছে ১৩টি এমএফএস কোম্পানি। এমন বাস্তবতায় সর্বোচ্চ ২০টি নতুন ধারার ডিজিটাল ব্যাংক গড়তে লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এই ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভূক্তির পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে উদ্ভাবনে প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে বলেই মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

সে লক্ষ্যে ‘অনলাইনে আবেদন’ জমা দেওয়ার জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল থেকে গত ২১ জুন অনলাইন আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটি নিয়ে এমএফএস ও আইটি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও লাইসেন্স আবেদনের ক্ষেত্রে ‘ক্ষীপ্রতা’ নেই এখনও। আগামী ১ অগাস্টের মধ্যে লাইসেন্স জমা দেয়ার সুযোগ থাকায় কর্মদিবসের প্রথম সপ্তাহে লাইসেন্স পেতে জমা পড়েনি একটি আবেদনও। ৪২ দিনের মধ্যে ১৫ দিন অতিক্রান্তের পরও আবেদন করেননি একজন উদ্যোক্তাও।

তবে আবেদন করার আগাম আভাস দিয়েছে দেশের আলোচিত দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ। প্রবল আগ্রহ থাকলেও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বেসিস বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ না করায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছে।

ডিজটাল ব্যাংক নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (দায়িত্ব প্রাপ্ত) জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ ২০ জনকে এই লাইসেন্স দেয়া হবে। ঈদের ছুটির আগ পর্যন্ত ডিজিচাল বাংক এর জন্য কেউ আবেদন না করলেও জুলাই মাস নাগাদ আবেদন পাওয়া যাবে। প্রাপ্ত আবেদন যাচাই বাছাই করে এলওয়াই দেয়া হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের বাইরে থাকা মানুষকে এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে আনা হবে।

এমন পরিস্থিতিতে আবেদনের সময় বেধে না দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের যোগ্যতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী আবেদন করবে এমন সুযোগ থাকার পাশাপাশি এখানে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে গোটা কয়েক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া উচিত।

সূত্রমেতে, ব্যয় সাশ্রয়ী ও উদ্ভাবনীমূলক ডিজিটাল আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট সহজলভ্য করার জন্য ডিজিটাল ব্যাংক অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে নতুন ধারার ‘ডিজিটাল ব্যাংক’- কে।  শর্ত অনুযায়ী, ন্যূনতম ৫০ শতাংশ আইটি দক্ষদের নিয়ে গড়ে উঠবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, এই ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম মূলধন লাগবে ১৫০ কোটি টাকা। কোনা শাখা ছাড়াই এই ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ, ঋণ আবেদন ও ঋণ অনুমোদন সবই হবে অ্যাপভিত্তিক। লেনদেনের সুবিধার্থে ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড পাবেন গ্রাহকরা। তবে ডিজিটাল ব্যাংক কোনো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারবে না। বড় এবং মাঝারি শিল্পেও কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। শুধু ছোট ঋণ দিতে পারবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোনো সদস্য প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ কতজন পরিচালক হতে পারবেন, তা ঠিক করা হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যার মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, রেগুলেশন, গাইডলাইন, সার্কুলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত, ডিজিটাল ব্যাংকটি মূলত চলবে ভার্চুয়ালি। এনআইডি দিয়েই এই ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন যে কোনো বাংলাদেশী। ব্যাংকের লেনদেন থেকে শুরু করে ঋণ পুরো প্রক্রিয়াই চলবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। ধারণা করা হচ্ছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সীমাবদ্ধতা দূর করবে ডিজিটাল ব্যাংক। এফএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে স্বতন্ত্র ও স্বম্ভূ নিজস্ব ঠিকানা।