লোহাগাড়া থেকে মোঃ ইউসুফ: নিজেদের সুখের আবাসস্থল ত্যাগ করে খাবারের সন্ধানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে অত্র উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের জনপদে এক ঝাঁক অতিথি পাখি। মাথা গুজিয়ে জলাভূমিতে ও পাশ্ববর্তী বৃক্ষের মগডালে বসে থাকে সারাক্ষণ। খাবার সংগ্রহে অবাধবিচরণ করে উক্ত জলাভূমিতে। সাম্য-মৈত্রীর বন্ধনে তাদের আগমন এবং অবস্থান। নেই ঝগড়া-বিবাদ, আছে মিলন বন্ধন তাদের মাঝে। জলাভূমির জলজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা-মাকড় তাদের প্রিয় খাবার। কনকনে শীতে হয় ¤্রয়িমান। আবার দিনের রোদে হয়ে ওঠে সতেজ ও প্রফুল্ল। মাথা গুজিয়ে দু’পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে জলাভূমির মাঝে খাবার শিকারে। মানুষের আনা গোনায় তেমন ভীত নয়, কাছে গেলে উড়াল দিয়ে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় নীরবে বসে থাকে।
জানা গেছে, দূর-দূরান্তের অতিথি পাখিরা খাবারের সন্ধানে আবাসস্থল ত্যাগ করে বিভিন্ন এলাকায় আসে। অন্যান্য এলাকার মতো বেশীর ভাগ শীতকালে এ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। দিঘী বাজলা ভূমিতে তাদের অবস্থান দেখা যায়। তাদের মধ্যে দেখা যায়, সাম্য,মৈত্রী ও মিলন বন্ধনের বিরল দৃষ্টান্ত। অতিথি পাখির মিলন মেলার অপরূপ শোভা পথচারী ও এলাকাবাসীকে মুগ্ধ করে।
অবুঝমনের শিশুরা কৌতূহলী মনে এগিয়ে গিয়ে বিরক্ত করলে তারা তৎক্ষণাৎ পাকা মেলে উড়াল দিয়ে পাশর্^বর্তী গাছের ডালে বসে পড়ে। করেনা কোন অভিযোগ বাবাদ-প্রতিবাদ। মৌণ-বাক্যহীন নির্জন স্থানে বসে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে প্রকৃতির পানেকি যেন বলার জন্য। হয়তো জানতে চায় তাদের প্রতি এ নির্দয় আচরণ কেন।
এলাকা পরিদর্শনকালে সাক্ষাৎ হয় ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক মোঃ বেলাল উদ্দীনের সাথে। তাঁর বাড়ি নাওঘাটায়। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, শীতেরএ’ভরা মৌসুমে স্থানীয় কৃষকেরা বোরো ধানের চাষ ও শাক-সবজি উৎপাদনে জমি আবাদে ক্ষেতপ্রস্তুত করার কাজ শুরু করেন। কৃত্রিমভাবে পানি সেচের ব্যবস্থা করে জমি চাষের উপযোগী করেন। লুকিয়ে থাকা জলজ কীট-পতঙ্গ গুলো জলা ভূমিতে নব জীবনেরনতুন প্রেরনায় জেগে উঠে। আপন খুশীমনে জলা ভূমিতে বিচরণ করতে থাকে। ওইদিকে, অতিথি পাখির ঝাপটা থেকে বাচতে জলাভূমির কীট-পতঙ্গরা আত্মরক্ষায় এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে। ২৯ জানুয়ারী এলাকা পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, নাওঘাটা এলাকার সমাতল জলা ভূমিতে অতিথি পাখি সাদাবকের ঝাঁকের এহেন দৃশ্য প্রতিবছর এ মৌসুমে দৃষ্টি গোচর হয়। তাদের মিলন মেলায় প্রমাণ হয়, তারা সৌহার্দ্যময় পরিবেশে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ। কনকনে শীতের হিমেল হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ডানা মেলে খাবারের সন্ধানে নিজ আবাসস্থল ত্যাগ করে বহু দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে। ভয়-ভীর্তি উপেক্ষা করে তাদের এ’আগমন এলাকার পরিবেশবাদীদের জন্য এক অনন্য প্রেরণায় উৎসব বলে অনেকের মন্তব্যে শুনা গেছে। স্থানীয় লোকালয়ের জনগণ ও পথচারীরা এ দৃশ্য দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। আবার, পাড়া-গাঁয়ের দূরন্তপনা শিশুরা আনন্দ উপভোগ করতে তাদের পানে ছুটে যায়। এতে সাদা বকের ঝাঁক ভীত হয়ে ডানা মেলে উড়াল দিয়ে কিচির-মিচির শব্দ করে পাশর্^বর্তী বৃক্ষের মগডালে গিয়ে বসে চেয়ে থাকে খোলা মাটের দিকে। এ’ভাবেই অতিথি পাখিদের আনা গোনায় মুখরিত হয় উপজেলার বিভিন্ন জনপদের সমতল জলা ভূমিগুলো।
