দেশবাসীকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম।
আজ শুক্রবার ২২ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর হাজারীলেইনস্থ দলীয় কার্যালয়ে সিপিবি চট্টগ্রামের উদ্যেগে আয়োজিত এক কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আহবান জানান।
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যত নির্বাচন হয়েছে সব বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন আমরা দিনের ভোট রাতে হতে দেখেছি। এখন আমরা দেখছি আরেক রকমের নির্বাচন। গুণগতভাবে এসব নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু কৌশল ও পদ্ধতিতে। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। এসব তামাশা করার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি।’
বাংলাদেশে উত্তরাধিকারের রাজনীতি চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এটা কি দ্বাদশ নির্বাচন না একদলীয় নির্বাচন। একদলীয় নির্বাচন এজন্য বলছি যে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা একটি তামাশার নির্বাচন। দেশ আজ এমন জায়গায় চলে গেছে। মাইকিং বা পোস্টার এগুলার কোনো প্রয়োজন আছে আর। মানুষ তো মনে করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় চলে গেছে। মানুষ ভোট দিলেও নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতবে না দিলেও জিতবে। নির্বাচন এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে চলে গেছে। আমি দেশবাসীকে আহবান জানাই এ তামাশার নির্বাচনে আপনারা ভোট দিতে যাবেন না। ভোট বর্জন করুন।’বাংলাদেশে চলছে উত্তরাধিকারের রাজনীতি। এটা এন্টি ডেমোক্রেটিক। ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে। তারা তাদের ইচ্ছে মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এখানে বিকল্প শক্তি দরকার। জনগণের বিকল্প শক্তি খুবই প্রয়োজন। আজ মানুষ যদি রাজনীতি বিমূখ হয়ে যায় লাভ হবে আমলা, ব্যবসায়ীদের। যারা রাজনীতি চাই না তাদের।’
কমরেড শাহ আলম বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া মানুষ ভোট দিতে পারবেনা এ অভিজ্ঞতা মানুষের আছে। এটা নতুন বিষয় নয়। জিয়াউর রহমানের আমলে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেনি। তখন রাত ১১ টার মধ্যেই ফলাফল বের হয়ে যেত। এরশাদ আমলেও একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হয়েছে। ১০ বছর স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এজন্য ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি স্লোগান তুলেছিল আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। এটা কমিউনিস্ট পার্টির অবদান। মানুষ সে স্লোগান লুফে নিয়েছিল।’ এরশাদ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ১০ বছর লড়াই সংগ্রাম চালিয়েছিল এদেশের মানুষ। আমাদের জেলে যেতে হয়েছে বারবার। এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসল। ১৯৯৬ সালে একটি মিথ্যা নির্বাচনে্র মধ্য দিয়ে আবারও তারা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সঙ্গে কৌশলভাবে জোট করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য আন্দোলন করে। অথচ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অজুহাত দিয়ে তুলে নিল। তারপর নির্বাচনকে একেবারেই নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের এ সংকট নিরসনে দেশের মুক্তিকামী সকল মানুষকে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি তার জোরদার আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
