লোহাগাড়া থেকে মোঃ ইউসুফ ঃ-স্বাদে অতূলনীয় ভাপা পিঠা ও খেজুর রস। গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কলসীভরা খেজুর রস লোহাগাড়া। ফলে, ভাপা পিঠার কদর ও কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে গ্রাম বাংলার জনপদের বাড়িঘরে চলে আসছে নবান্ন উৎসব। একই সময় চলত খেজুর রস ও ভাপা পিঠার ধূমধাম। ভাপা পিঠা খাওয়ার অন্যতম স্বাদের উপকরণ ছিল খেজুর গাছের মিষ্টিরস। আমন চাষের ফসল ঘরে আসার সাথে সাথে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। সাথে চলে ভাপা পিঠার তৈরী ও খাওয়ার ধুমধাম। এলাকার সঙ্গতিসম্পন্ন পরিবার এ পিঠা, মাংস ও খেজুর রস মেয়ের শ^শুরালায়ে পাঠাতেন আঞ্চলিক প্রথানুসারে। কিন্তু, প্রাকৃতিক পরিবেশের আবর্তন-বিবর্তন ও মানুষের লোভ-লালসার কারণে গ্রাম বাংলার জনপদ থেকে খেজুর গাছ যেমন বিলুপ্তির পথে, অনুরূপভাবে বঞ্চিত হয়েছেন লোহাগাড়ার জনপদের খেজুর রস প্রেমিক মানুষগুলো ও বছরে একবার এ মৌসুমে তাঁরা খেজুর রস গ্রহণ করার সুযোগ পেতেন। তখন বাড়ির আশে-পাশের খোলা জায়গায়,পুকুরের পাড়ে বা সড়কের পাশের্^ শোভা পেত খেজুর গাছ। সময়ের প্রয়োজনে গাছের মালিকেরা জ¦ালানীর উপকরণ হিসেবে অন্যের কাছে বিক্রি করে ফেলেন। বিশেষ করে ইট ভাটায় জ¦ালানী হিসেবে এর ব্যবহার উত্তম। তা’ই এলাকার এর গাছের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গাছের মালিকেরা চড়া দামে খেজুর গাছগুলো বিক্রি করে ফেলেন।
বর্তমানে ভাপা পিঠা বটতলী মোটর ষ্টেশনসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে কতিপয় ভাসমান দোকানীরা তৈরী ও বিক্রি করছেন। পিঠা প্রেমিকেরা রস না পেয়ে নিরুৎসাহিত। বটতলী মোটর ষ্টেশনের ভাপা পিঠা বিক্রেতা ভাসমান দোকানী অলী জানান, খেজুর রস না থাকায় অনেক পিঠা ক্রেতা খুশী নন। বর্তমানে খেজুর রস সোনার হরিণ। পাড়া-গাঁ এক প্রকার খেজুর গাছ শূণ্য। যে কারণে খেজুর রস সহকারে ভাপা পিঠা বিক্রি করতে পারছেননা। উত্তর আমিরাবাদ তজুমুন্সীর গ্যারেজ সংলগ্ন পাড়ার জনৈক জালাল আহমদ জানান, এখনো তাঁর ২/৩ খেজুর গাছ রয়েছে। প্রাপ্ত রস জনগণের চাহিদার তূলনায় খুবই নগন্য। এ’ছাড়া উপজেলার কোন কোন এলাকায় মাঝে-মধ্যে ২/১ টি খেজুর গাছ দেখা যায়। এতে স্থানীয়দের রসের চাহিদা পূরণ হয়না বলে গাছের মালিকেরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে চরম্বা, আমিরাবাদ, পশ্চিম কলাউজান এলাকার কতিপয় খেজুর গাছের মালিকেরা জানান, তাঁদের খেজুর গাছ আছে। তবে, গাছ কেটে রস পাওয়ার উপযোগী করার শ্রমিক না পাওয়ায় তাঁদের খেজুর গাছগুলো এমনিভাবে পড়ে আছে। তাঁরা আরো বলেন, এক সময় দূর-দূরান্তের লোক এসে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খেজুর গাছগুলো কেটে-ছিঁড়ে রস পাওয়ার উপযোগী করে দিতেন, কিন্তু বর্তমানে ওই শ্রেণীর শ্রমিক না আসায় গাছগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। অপর দিকে, কোন কোন সময় খেজুর গাছ কেটে রস আহরণ করতে সন্ধ্যায় কলসী বসিয়ে দিতেন। সকালে কলসীভরা রস বাড়িতে এনে আগুনে সিদ্ধ করে লাল করার পর তাঁরা ওই রস দিব্যি আরামে নিজে পান করতেন এবং বিক্রি করে টাকা উপার্জন করতেন। আবার, কোন কোন সময় রাতের অন্ধকারে বখাটে ছেলেরা চুরি করে কাঁচা খেজুর রসগুলো খেয়ে ফেলতো এবং যাওয়ার সময় কলসীটা ভেঙ্গে দিতো। যে কারণে অনেকেই গাছ না কেটেই এমনিভাবে রেখে দিয়েছেন। সব কিছু মিলে এলকার জনপদ থেকে খেজুর গাছের রস যেভাবে বিলুপ্তির পথে, অনুরূপভাবে কদর কমে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাপা পিঠার।
