লোহাগাড়া থেকে মোঃ ইউসুফ : সুজলা-সুফলা,শষ্য-শ্যামলা ও নৈসর্গিক শোভামন্ডিত লোহাগাড়া উপজেলার জনপদসমূহ। প্রাকুতিক সম্পদের প্রাচুর্য, পাহাড়-টিলা-বেষ্টিত সবুজ অরণ্যময় প্রকৃতির পুষ্পঘ্রাণ ও সৌন্দর্যে উদ্বেলিত। পুকুর-দিঘী,খাল-ছড়া, বিল-ঝিল, ছোট-বড় জলাশয় বেষ্টিত সমতল ভূমির অপরূপ দৃশ্য গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-উপভোগের সরস প্রাণের জীবন্ত উৎস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ শোভায় মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে চিত্ত বিনোদনে নানা জাতের ফুল। পুষ্প মনোলোভা ও সৌন্দর্যের প্রতীক এ ফুলের মধ্যে জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করেছে শাপলা।
ষড়ঋতুর বৈচিত্রময় সোনার বাংলায় বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকম ফুল দেখা যায়। এ’ফুল মানুষের পরম বন্ধু। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলের সমাগম ঘটে। ঋতরাজ বসন্ত ফুলে-ফলে সাজিয়ে দেয় প্রকৃতিকে। আবার ফাল্গুন-চৈত্র ফুলের অপরূপ শোভায় উদ্ভাসিত হয় জনপদ। শরৎ শান্ত হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় আন্দোলিত হয় প্রকৃতির রূপভান্ডার শাপলা-শালুকের রূপের বর্ণচ্ছটায়। বলা চলে, পুষ্পপ্রেম জীবন চেতনায় পরিশ্রুত ও লাবণ্যময়ী রূপ। এর রূপ,লাবণ্য ও আনন্দে মানুষ খুঁজে পায় অনাবিল সুখ-শান্তি ও মন-মানসিকতার উৎকর্ষ সাধনের উপায়।
একদা গ্রামীণ জনপদের প্রাচীন ঐতিহ্য ছিল জাতীয় ফুল শাপলা। জনপদের পুকুরে,জলাশয় ও দিঘীতে শোভা পেত এ’ফুল। সৌন্দর্যের বাহার ছড়িয়ে আনন্দ দান করত ফুল প্রেমিদের মনে। প্রকৃতি প্রেমিকেরা ও উপভোগ করতেন এ’ফুলের সৌন্দর্য। গ্রাম বাংলার জনপদের প্রাচীন ঐতিহ্য নয়ন বিমোহী এ শাপলা ফুল অবশেষে জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করে। শাপলা ফুলের জন্মবৃত্তান্ত বৈচিত্রময়। এ’ফুলের চাষ করতে হয়না। গ্রামের কোন কোন পুকুর,দিঘী বা জলাশয়ে এ ফুল দেখা যেত। গোড়া থাকে পানির তলদেশে কাদার সহিত এবং রসালো কান্ডখানা মাথার উপর ফুল নিয়ে পানির উপরে ভেসে থাকে ফুল প্রেমিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। পাড়া গাঁয়ের শিশুরা শাপলা ফুলের উপর আসক্ত। তারা সাঁতার কেটে ও পুকুরে ডুব দিয়ে শাপলা ফুল তোলে এবং মনের আনন্দে রসালো কান্ড ও ফুলের কুঁড়ি খেতে থাকে। এমনকি এক সময় দেখা যেত এ শাপলা ফুল হাট-বাজারে বিক্রি হতো। অনেকেই এ শাপলা ফুল সবজি হিসেবে রান্না করে খেত। রান্না করা খাবার স্বাদে ছিল অতূলনীয়। কিন্তু সময়ের আবর্তন-বিবর্তনে ও পুকুর-জলাশয়ে আধূনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার ফলে বর্তমানে এ’ফুল প্রায় বিলুপ্ত। তবে, প্রতিবছর এ মৌসুমে দেখা যায় অত্র উপজেলাধীন আমিরাবাদ ইউনিয়নস্থ বার আউলিয়া ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন একটি পুকুরে। আরকান সড়কের পাশে পুকুরটি অবস্থিত। তাই সহজেই পথচারী দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুকুরের জলে ফুটন্ত এ’শাপলা ফুল। কলেজ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, কলেজ পুকুরের ফুটান্ত এ শাপলা ফুল অনায়াসে ফুল প্রেমিকদের মনে আনন্দ দান করে যাচ্ছে। কলেজ চলাকালীন সময়ে কোন কোন শিক্ষার্থী পুকুরের পাড়ে গিয়ে ফুটান্ত শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায়। কলেজ শিক্ষার্থী সাইমা বেগম জানায়, কলেজ পুকুরের ফুটান্ত জাতীয় ফুল এ শাপলা অবশ্যই বিশাল ভাবার্থ নিয়ে তাদের সামনে উপস্থিত হয়। জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করায় তারা এ ফুলের মধ্যে অনেক কিছু খুঁজে পায়।
