আজ ৫ জুন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে বিশ^ পরিবেশ দিবস ২০২৩ উপলক্ষে নগরীর সিআরবি এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, বিশে^র প্রথম দেশ হিসেবে ২০০২ সালে বাংলাদেশে পলিথিন শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও ‘‘পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫’’এ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও লেমিনেটেড প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ না হওয়ায় ফলে ‘‘প্লাস্টিক দূষণ’’ অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রাম মহানগর নেতৃবৃন্দ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধনে অনতিবিলম্বে প্লাস্টিকের বেআইনি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার রোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫Ñএর ৬(ক) ধারা সংশোধন, দূষণ-কর আরোপ এবং প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের জবাবদিহির লক্ষ্যে পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমিয়ে বিশ্বকে বসবাসের উপযোগী রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালনে মানুষকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ জুন ‘‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’’ হিসেবে পালন করা হয়। এ বছর পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য প্লাস্টিক দূষণের সমাধান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রমগুলোকে ত্বরান্বিত করতে সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পরিবেশ বান্ধব ‘‘সার্কুলার ইকোনমি’’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাত্যহিক জীবনে পচনরোধী প্লাস্টিকের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে যা মাটি, পানি, বায়ুম-ল, বন্যপ্রাণী, মানবস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ সরকার ‘‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’” প্রতিপাদ্যে ‘‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’’ স্লোগানকে সামনে রেখে দিনটি উদ্যাপন করছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ এর মাধ্যেমে পরিবেশের জন্য টেকসই এবং সাশ্রয়ী ও বিকল্প উন্নত জীবন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। এছাড়াও মানববন্ধন থেকে পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ জলবায়ু অর্থায়নে পরিচালিত সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতার চর্চা ও জন-অংশগ্রহণ বৃদ্ধির দাবিসহ নয় দফা দাবি পেশ করা হয়।
সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও টিআইবি’র এরিয়া কোঅর্ডিনেটর মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে টিআইবি’র ধারনাপত্র পাঠ করেন ইয়েস সদস্য সানু আক্তার নদী।
সনাক-টিআইবি, চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় বিশ্ব ব্যাংক প্রণীত একটি অ্যাকশন প্ল্যান নীতিগতভাবে গ্রহণের পাশাপাশি জেলা কার্যালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহে ‘‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’’ ব্যবহার বর্জনের যে নির্দেশনা প্রদান করেছে, তা যেন শুধু ‘‘কাগজে-কলমে’’ সীমাবদ্ধ না থাকে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় গৃহীত সকল কর্মকা-ে সাধারণ জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অর্থবহ সচেতনতা ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণ রোধে ব্যবহৃত তহবিলসহ সার্বিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি, আইন ভঙ্গকারী এবং প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের কার্যকর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সনাক- টিআইবি জোর দাবি জানান।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সনাক সহ-সভাপতি রওশন আরা চৌধুরী, সনাক সদস্য সঞ্জয় বিশ^াস, এ এইচ এম জিলানী চৌধুরী, ওয়াইডাব্লিউসিএ এর সাধারণ সম্পাদক সিনথিয়া ডি রোজারিও, পান্না দে, সনাক-টিআইবি’র ইয়েস দলনেতা গোলাম ইসহাক খান, মো: রাজু ইসলাম প্রমুখ।
