২৫শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার শরৎকাল

জাতীয় দিবস বিভ্রাট

শিবুু শংকর বোস – ১৬ ই ডিসেম্বর আমরা আমাদের বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী পালন করেছি। যা একটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য বিরাট অর্জনের বিষয়। এই বছরটি একেধারে আমাদের স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী, বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী ও আমাদের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী বা মুজিব বর্ষ ছিলো যা আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরো বছর ধরেই যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করি।
আমার আজকের লিখার বিষয় হলো প্রথম দুটো দিবসের বিষয়ের উপর বা স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী ও বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী নিয়ে।
এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, আজ আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী পালন করছি কিন্তু এই দুটো দিবসের যে আলাদা তাৎপর্য রয়েছে তা আমরা এখনো আত্মস্থ করতে পারিনি। আজ (১৬ই ডিসেম্বর) সকাল থেকেই ফেইসবুকে দেখছি প্রায়জনই তাদের পোষ্টে লিখছে শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ!!!! তার মানে তাদের ধারনা ১৬ই ডিসেম্বরই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। এটা আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না কারন আলাদা করে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস পালনের বিরলতম গর্বিত অংশীদার এমন ২ টি দিবস পৃথিবীর ৯৯% দেশেই নেই।
আমাদের পাশবর্তী দুই দেশ ভারত আর পাকিস্তানকে ইংরেজরা স্বাধীনতা দিয়েছে, আর বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। ‘দেয়া’ আর ‘নেয়া’র ভেতরে বিরাট একটা পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্যটা যারা বোঝেন না স্বাধীন দেশে থেকেও স্বাধীনতার আনন্দটা তারা কখনো উপভোগ করতে পারেন না।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ ই আগস্ট আর পাকিস্থানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ ই আগস্ট।
আমাদের একটি স্বাধীনতা দিবস আর একটি বিজয় দিবস।
এই দেশের ৮০ ভাগ ছেলে মেয়ে স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসে কি তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকে শুধু ছেলে মেয়েই না অনেক শিক্ষিতমহলও তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এই তালগোল পাকিয়ে ফেলাটা যে কি আনন্দের তা কোন পাকিস্থানী বা ভারতীয়রা বুঝবে না। (আনন্দের বলছি এই জন্য যে আমি সবসময়ই পজেটিভ থিনিংয়ে বিশ্বাস করি) কারণ, তাদের স্বাধীনতা আছে কিন্তু বিজয় নেই! তাই তাদের দুটো দিবস নিয়ে বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের এই অহংকারকে নিয়েও আজ আমরা বিভ্রান্ত। এক প্রকার খ্যাতির বিড়ম্বনার মত। এর কারন হলো দেশে সঠিকভাবে ইতিহাস চর্চা না করা, শিক্ষাসুচীতে সঠিকভাবে ইতিহাস বিষয়টিকে সাজাতে না পারা। আমরা যদি একটি সুপরিকল্পিত শিক্ষাসুচী ও সর্বত্র সঠিক ইতিহাস চর্চাকে গুরুত্ব দিই তবেই এমন বিভ্রান্ত গুলো থেকে আমরা বার হয়ে আসতে পারবো না হয় ভবিষ্যতে এই জাতির হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।
এবার আমি এই স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসের বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারনা দিয়ার চেষ্টা করবো। ধরুন একটি শিশু জন্মগ্রহন করলো ২৬ শে মার্চ কিন্ত জন্মের পর পরই শিশুটি কোন কারনে আইসিইউতে ভর্তি হতে হলো আর মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে লাগলো বা সংগ্রাম করতে লাগলো এতে শিশুটির পরিবারও সংগ্রামে যুক্ত হয়ে গেল এবং সংগ্রাম করতে করতে শিশুটি এক সময় দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রামের পর ১৬ ই ডিসেম্বর শিশুটি সুস্থ বা আইসিইউর বন্ধি দশা থেকে মুক্ত হয়।
এখানে উল্লেখ্য যে শিশুটির জায়গায় বাংলাদেশকে কল্পনা করে ২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়ে যায় যা আমাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পরিচিত। আর আইসিইউর ভর্তি বা জীবন সংগ্রামকে আমাদের সেই সদ্যজন্মজাত বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করার সংগ্রাম হিসেবে ধরলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। অতপরঃ দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের বিনিময়ে আমরা ১৬ ই ডিসেম্বর সেই সদ্যজাত জন্মনেয়া বাংলাদেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হই। এটাই হলো আমাদের বিজয় দিবস।
আশা করি বিষয়টি আপনাদের সামনে পরিষ্কার করতে সক্ষম হলাম।