২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বুধবার শরৎকাল

সুবর্ণ জয়ন্তীতে বিজয় দিবস

আবছার উদ্দিন অলি : সুবর্ণ জয়ন্তীতে এবারের বিজয় দিবস উদ্যাপন হবে। ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫০ বছর অতিবাহিত করলো ২০২১ সালে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল, সে স্বপ্ন পূরনের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশে^র উন্নয়নের রোল মডেল। ১৯৭১’ সালের এই দিনে বিশ্ব মান চিত্রে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন এই ভূখন্ড। তার বিনিময়ে আমাদের হারাতে হয়েছে অনেক কিছু। বিজয়ের এই দিনে আমরা স্মরণ করছি আমাদের সে সব অকুতোভয় বীর সেনানীকে। পৃথিবীর সবদেশে ছড়িয়ে থাকা সকল বাঙালিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। যুদ্ধ চলাকালীন সাহস শক্তি অনুপ্রেরণা উৎসাহ যুগিয়েছেন আমাদের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারার মতো গৌরবের বিষয় আর কি হতে পারে। বাংলাদেশের জন্ম ও নতুন জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন যুদ্ধ করেছেন ইতিহাসে তারা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। স্বপ্নের হাজারো রং ছড়িয়ে আমরা সবাই চাই আমাদের দেশটাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে। সকল শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। করোনা ও অমিক্রন ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সারাদেশে চলছে বিজয় দিবস উদ্যাপনের নানা আয়োজন। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।
বিজয় আমাদের অহংকার। বিজয় দিবস আবার এসেছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ বিজয় দিবস ৫০ বছর অতিবাহিত করবে। একটি একটি করে ৫০ টি বছর পার করলাম আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কি পেরেছি এ প্রশ্নের জবাবে উত্তর এখন সহজে মিলে। নাটক, সিনেমা, সংগীত, বিজ্ঞাপন, যাত্রা, ষ্টেজ শো, বেতার, টেলিভিশন, স্যাটেলাইট চ্যানেল, এফ.এম.রেডিও, দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা সংবাদ সংস্থা, নিউজ এজেন্সী, অনলাইন পত্রিকা সব কিছুতে পরিবর্তন এসেছে। উন্নয়ন হয়েছে, উন্নতি হয়েছে, উর্বর বেড়েছে। শুধু মাত্র পরিবর্তন হয়নি আমাদের রুচি মন মানসিকতার আর চিন্তা শক্তির। মানুষ ঠকানো আর দুই নম্বরী কাজ সমান তালে চলছে। কে কাকে মেরে বড় লোক হবে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। রাজনীতিতে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন প্রকট হয়েছে। ৫০ বছরেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি বাঙ্গালির। নতুন করে শুরু হোক বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নবযাত্রা। আর বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক নতুন আশার আলো স্বাধীনতার সুফল। সে ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনরাবিস্কারের এক মহান ব্রত নিয়ে আমরা যে অভিযাত্রা শুরু করছি তা আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রে, সম্ভাবনার শত পুষ্প বিকশিত করতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। দেশের গান বাঙালির চেতনার জাগরনের গান। বহু বিখ্যাত দেশের গান রয়েছে যাতে দেশ প্রেম উৎসারিত হয়েছে চিরকালিন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, ভাব, স্বাধিকারের জন্য আত্মবলিদান এই সমস্ত গানের মূল ভাব ও বিষয়। স্বাধীন বাংলার এযুগের মায়েরা এখন ঘুম পাড়ানী গানের মতো গুনগুনিয়ে দেশের গান গেয়ে শিশুকে ঘুম পাড়ায়। এই গান তারুণ্যের উচ্ছ্বাস জাগায়। আবার নতুন করে একটি শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার তরুনদের শপথ নেয়ায়। এসকল গানের চাহিদা কখনো ম্রিয়মান হবার নয়।
দেশ আমার মা, আমার জন্মভূমি তাই দেশের প্রতিটি মানুষের ভালবাসা আমার হৃদয়ে জড়িয়ে আছে। প্রতিটি ধুলিকনা আমার শরীরের সাথে শ্বাস প্রশ্বাসে প্রতিনিয়ত মিশে আছে সে মাটির মায়া মমতা এখনো আমাকে আপ্লুত করে, তাই দেশের গানের প্রতি আমার দূর্বলতা সবসময় বেশি কাজ করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ হয়ে দেশকে ভালোবাসি তাই সর্বদা দেশের গানের প্রতি মমত্ববোধ রয়েছে সংগীত জীবনের শুরু থেকে। মা মাটি ও মানুষের কথা সুরের মাধ্যমে বলতে পারলে বুঝবো আমার ঋণ কিছুটা অন্তত পরিশোধ করতে পেরেছি। দেশের গান, দেশের মান, সংগীতের প্রাণ। আওয়াজ তুলি দেশকে ভালোবাসি দেশের জন্য সর্বদা ত্যাগ করতে প্রস্তুত আছি। এগিয়ে যাক সুন্দর আগামীর পথে। ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর। জীবন জয়ের গৌরবে দীপ্ত সূর্য মহিমায় উদ্ভাসিত আমাদের বিজয় দিবস। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এ বিজয় কারো একার নয়। এ গৌরব কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি সহ নারী-পুরুষ সকল জনতার। যাদের আত্মত্যাগে আমাদের এ অর্জন বিজয়ের গৌরবে তাঁদের স্মরনে রচিত হয়েছে হাজারো দেশের গান। গানে গানে সশ্রদ্ধ হৃদয়ে জাতি তাঁদের মনে রাখবে চিরকাল।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বিজয়ের ৫০ বছরে আমাদের স্লোগান হওয়া উচিত, মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতিচর্চা হোক জীবনের অঙ্গ, রাজনীতির অঙ্গ। যারা মুক্তিযুদ্ধের ধারা অস্বীকার করে বা বিরোধিতা করে তারা হচ্ছে সেসব লোক যারা পিতার হত্যাকারীদের বন্ধু মনে করে, মাতা অপহারণকারীকে বরণ করে, ভগ্নির ধর্ষণকারীর সঙ্গে করমর্দণ করে, ভ্রাতার হত্যাকারীকে বুকে জড়িয়ে বন্ধুর হত্যাকারীকে মাল্য ভূষিত করে। এরা যদি সমাজে আধিপত্য বিস্তার করে আগাছার মতো বাড়তে থাকে, তাহলে বর্তমান প্রজন্মকে আমাদের সময়ের চেয়েও বেশি অপমানিত হতে হবে। আপসের সংস্কৃতি নয়, মুক্তিযুদ্ধের সংস্কৃতিকেই বরণ করার সময় এসেছে, সময় এসেছে তা বরণ করে নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার। কাঙ্খিত স্বপ্নের সোনার বাংলা-যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য থাকবে সম্ভাবনার অপার দিগন্ত। হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি, সংঘাত, সহিংসতা বন্ধ হোক, হাসি ফুটুক ১৮কোটি মানুষের মুখে। লাল সবুজের পতাকায় বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়–ক সারা দেশে। অকুতোভয় আত্মত্যাগে লড়াইয়ের প্রেরণা জাগে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।