বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন অনুষদের চার শিক্ষার্থী আরমান, মেহেদী, সাদিক ও বাধন। প্রায়ই তাঁরা বেরিয়ে পড়েন সাইকেল নিয়ে বহু দূরের গন্তব্যে। এবার চার বন্ধু মিলে ঘুরে বেরিয়েছেন ময়মনসিংহের গোবড়াকুড়া বর্ডার থেকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে পর্যন্ত। রোমাঞ্চকর এই সাইকেল ভ্রমণের গল্প জানিয়েছেন তাঁরা ।
তাঁদের যাত্রা শুরু হয় ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া বর্ডার থেকে। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৫৭ কিমি দূরে অবস্থিত এই বাংলাদেশ- বর্ডারটি। হালুয়াঘাট বাজারে পৌঁছাই রাত দেড়টায়। পৌঁছে রাতে খাবার খেয়ে বর্ডারের উদ্দেশে শহরে আসতে সকাল ৮টা বেজে যায় । ময়মনসিংহে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে দুপুরে ঢাকায় রওনা হই। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে রং সাইডে বিপরীত দিক থেকে আসা অটো, সিএনজি, মোটরসাইকেল।
ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশাল, ভালুকা হয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য রওনা করলেও গাজীপুর পর্যন্ত যেতেই রাত ১টা বাজে। তারপর সিদ্ধান্ত নেই গাজীপুরে রাতে থাকব। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেহেদীর বন্ধু শান্তর সঙ্গে যোগাযোগ করে গাজীপুরে অবস্থান করলাম। পরের দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ১১টায় আমরা মাওয়া ঘাটে রওনা হই । ঢাকা যাওয়ার পথে বড় একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই। সম্রাট নামে ঢাকার এক লোকাল বাস মেহেদীর সাইকেলে পাশ থেকে ধাক্কা দেয়। ভাগ্যিস যাত্রায় বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঢাকা থেকে বের হতে রাত ১০টা বাজল। ঢাকা-মাওয়া ৮ লেনের হাইওয়ে আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা হাইওয়ে। পরে মাওয়া ঘাটে পৌঁছাতে আমাদের রাত ৩টা বাজল। ট্রলার পরের দিন সকাল ৮টায়। পরে মাওয়া ঘাটের ইলিশ খেয়ে হোটেলেই বসে বসে ঝিমালাম সকাল পর্যন্ত।
তৃতীয় দিনের শুরুটা হলো মাওয়া ঘাট থেকে বরিশালের পথে রওনা। গুগল ম্যাপ দেখে চলে এলাম শরীয়তপুর হয়ে মাদারীপুর। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায় সাইকেল চালাচ্ছিলাম। আমাদের দেখে কয়েকজন আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে এসেছি আমরা। কালকিনি থেকে আমরা ঢাকা বরিশাল হাইওয়েতে উঠলাম। এই সম্পূর্ণ যাত্রার এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি। এক লেনের ঢাকা-বরিশাল হাইওয়েতে ৮০-১০০ কিমি বেগে চলা বাস, ওভারটেকিং, অন্ধকার রাত, আঁকাবাঁকা হাইওয়ে। প্রতিটা মুহূর্তে ভয়ানক পরিস্থিতি মুখোমুখি হচ্ছিলাম। এমনও হয়েছে সামনে থেকে বাস ওভারটেকিং করতে গিয়ে আমাদের মুখোমুখি। উপায় না পেয়ে সড়ক থেকে নিচে সাইকেল নামিয়ে দিতে হচ্ছিল।
তিন দিনের যাত্রার ক্লান্তি, পা ব্যথা ও শরীর ব্যথার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নেই চতুর্থ দিন সাইকেল কম রাইড করব। সেদিন দুপুরের খাওয়া শেষে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে রওনা হই। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের থেকে সকাল ৬টার দিকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সারাদিন সাইকেল চালিয়ে রাত ৯টার দিকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে পৌঁছায়। স্ট্রাভা অ্যাপের হিসাব অনুযায়ী ৬১০ কিমি সাইকেল চালানোটা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমরা দারুণ উপভোগ করেছি এই দীর্ঘ সাইকেল ভ্রমণ।