
দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বেকার হয়ে বসে আছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে গড়ে উঠা টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতাধীন তিন পার্বত্য জেলার ৪ হাজার ৮শ পাড়াকর্মী ও ৫শ মাঠসংগঠকসহ প্রায় ৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি। তাদের কষ্ট-দুর্দশা যেন দেখার কেউ নাই। বেকারত্বের দিন যেন শেষই হচ্ছে না তাদের। তার মধ্যে ৬ মাসের বেতনও বাকি রয়ে গেছে। আদৌ বকেয়া বেতনগুলো পাবে কিনা কোন নিশ্চয়তা তারা পাচ্ছেনা।

কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে যাতে পাড়া কেন্দ্র বন্ধ রাখে। প্রকল্প যদি নবায়ন হয় তখন পাড়া কেন্দ্র চালু করার জন্য জানানো হবে।
বকেয়া বেতনগুলো পাবে কিনা বা প্রকল্পটি আদৌ চালু হবে কিনা এই অনিশ্চয়তায় ভুগছে ৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি। তবুও তারা আশায় বুক বেধে বসে আছে হয়তো বা নতুন ভাবে প্রকল্পটি নবায়ন হবে। দীর্ঘ ৮ মাসের বেকারত্বের অবসান হবে। ৮ মাসের ধার দেনা শোধ করে আবার নতুন করে জীবন শুরু হবে। কিন্তু তাদের এই আশার প্রহর যেন শেষই হচ্ছেনা।

পার্বত্য এলাকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে এই পাড়া কেন্দ্রগুলো যেখানে দুর্গম পাহাড়ের দু-চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় নাই এমনকি নাই কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। সেখানে এই পাড়া কেন্দ্রগুলোতে প্রাক-প্রাথমিক লেভেলের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে শিক্ষার মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছে পাহাড়ে। কিশোরী, মহিলা এবং গর্ভবতীদেরও তারা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে এই পাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মীরা।
তাদের হাত ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকার বাসীন্দাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসলেও এখন তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকে রাখা যেনো এক মহা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে।

প্রথমত বেতন কম দ্বিতীয়ত দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বেকারত্বের কারনে বেতন বন্ধ থাকায় অনেক পাড়া কর্মীকে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার সন্দীপ পাড়া পাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মী শাহীনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে ৩ বছর আগে। বাহ্যিক তেমন কোন আয়-ইনকামও নাই আমার। তার মধ্যে ৮ মাস ধরে বেকার হয়ে থাকায় ধারকর্য করে চলতে হচ্ছে।
একই উপজেলার তেলুনিয়া পাড়া কেন্দ্রের পাড়াকর্মী রাজিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। অসুস্থ হওয়ায় কাজ একদিন করতে পারলে ৫ দিন পারেনা। তার মধ্যে ৮ মাস ধরে বেকার হয়ে যাওয়ায় বেতনও বন্ধ। পাঁচ সন্তানের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে এবং পড়ালেখার খরচ দিতে পারছি না ঠিক মতো।
১৯৮০ সালে ইউনিসেফের মাধ্যেমে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এই পাড়া কেন্দ্রগুলো। পরে ১৯৯৬ সালে এসে যুক্ত করা হয় শিক্ষা ব্যবস্থাকেও। তিন পার্বত্য জেলায় (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি) বর্তমানে ৪ হাজার ৮ পাড়া কেন্দ্রে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা করাচ্ছে এই পাড়াকর্মীরা। শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ প্রায় ডজনখানেক কার্যক্রমের মাধ্যেমে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে।
লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের মাঠ সংগঠক রিজওয়ানা হোসাইন বলেন, ৮ মাস বেতন বন্ধ হওয়ায় পাড়াকর্মীরাসহ আমরা খুবই আর্থিক সংকটে আছি। সরকার চাইলে আমাদের প্রকল্পটা খুব সহজে নবায়ন করে নিতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের বান্দরবান জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক আলুমং এবং লামা উপজেলার প্রকল্প ব্যবস্থাপক রেজাউল হক বলেন, প্রকল্পটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য রয়েছে। শুনেছি পাঁচ বছরের জন্য রিনিউ হতে পারে। যদি অনুমোদন হয়ে যায় আমরা নতুন করে কাজ শুরু করতে পারবো।
তবে প্রকল্প অনুমোদন হলে বর্তমানে যারা কাজ করে যাচ্ছে তারা বিগত ৮ মাসের বকেয়া বেতনগুলো পাবে কিনা জেলা প্রকল্প অফিসার আলুমং থেকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এবিষয়ে নিশ্চিতভাবে কোন কিছু বলতে পারেন নি।
উল্লেখ্য যে, দুই বছর আগেও প্রকল্প অনুমোদনের অজুহাতে পাড়াকর্মীরা চাকরি করে গেলেও ৯ মাস বেতন পায়নি বলে জানায় পাড়া কেন্দ্রের পাড়া কর্মীরা।