১৫ বছর আগে চারটি চেয়ার, একটি টেবিল, একটি বুকসেলফ আর মাত্র ২০টি বই নিয়ে যাত্রা করা গণপাঠাগারটি আজ ৯ হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ এক গণপাঠাগার। পাঠগারের নামে ক্রয়কৃত ২২ শতক জমির উপর নিজস্ব ভবনে চলছে পাঠ কার্যক্রম। যাত্রা শুরুর পর থেকে পাঠাগারের আশপাশ সংলগ্ন ৪টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছে, বইমুখী হয়েছে অনেক তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে পাঠ কার্যক্রমের পরিধির বিস্তার ঘটিয়েছে দেশব্যাপী।
যে শ্লোগান ধারণ করে যাত্রা হয়:
বাঁশখালী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ছনুয়া ইউনিয়ন। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেষে এই ইউনিয়নের অবস্থান। একটি বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকা। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা থেকে বহুদূর পিছিয়ে ইউনিয়নটি। একসময় পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বইয়ের সহসা দেখা মেলেনা এখানে । অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা এবং প্রত্যন্ত উপকূলীয় এলাকা হওয়ার দরুণ এখানে সাহিত্য-সংস্কৃতির ছোয়া লাগেনি যুগের পর যুগ । সূর্যের লালিমা উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে এখানকার মানুষের জীবিকা সংগ্রহের সংগ্রাম শুরু হয়, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা এখানে অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদে ‘অন্ধকারে আলোর প্রদীপ’ শ্লোগান নিয়ে পাঠাগারটির গোঁড়াপত্তন করেন এই গ্রামের যুবক সাঈফী আনোয়ারুল আজীম। তিনি ছোটোকাল থেকে লেখালেখি, সাহিত্য চর্চা ও সাংবাদিকতার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি সাহিত্যের ভাবধারাকে ধারণ করে অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষকে পাঠমুখী করণ, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ এবং ও সভ্যতা-ভব্যতার আদলে একটি জ্ঞান সমৃদ্ধ জাতি তোলার লক্ষ্যে পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ধীরেধীরে অন্ধাকারাচ্ছন্ন জনপদে আলোর দ্যোতি ছড়িয়ে দেন।
ছড়িয়ে দিয়েছে বইপাঠ:
প্রত্যন্ত এই উপকূল এলাকায় একসময় পাঠ্যবই ছাড়া অন্যকোনো বইয়ের দেখা মিলতোনা। দৈনিক পত্রিকা পড়া ছিল এখারে দূরূহ ব্যাপার। একটি পাঠাগারের বদৌলতে এখন এলাকার শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে বইয়ের দেখা মেলে, বিপুল বইয়ের সমাহার ঘটেছে। তৈরি হয়েছে ইচ্ছেমতো সবার বইপড়ার সুযোগ, শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় এসেছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাময়িকী। গ্রামের সাত বছরের শিশুটিও এখন দৈনিক কয়েকটি পত্রিকা পড়তে পারে এখানে । খুব সহসা জানতে পারছে দেশ- বিদেশের নানান খবরাখবর। প্রতিদিন পাঠাগারের আশপাশ সংলগ্ন এলাকা থেকে পাঠকরা এসে পাঠাগারে বই পড়েন, পছন্দের বইটি ১৫ দিনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যান। এভাবে কয়েকটি ইউনিয়নের বিপুল পাঠক পাঠাগার থেকে বই বাড়িতে নিয়ে যান। এই পাঠকদের সাথে পাঠাগারের একটি সাঁকো তৈরি হয়েছে, গড়ে উঠেছে আত্মার সেতুবন্ধন।
চাওয়া থেকে পাওয়া :
জ্ঞান অর্জনের জন্য চাই বই , মনের খোরাক মেটানোর জন্য চাই বই ।এ জন্য দরকার হরেক রকম বইয়ের সমাহার। দৈনিক পত্রিকা পড়তে হলে ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত উপজেলা সদর থেকে নিয়ে এসে পড়তে হতো। এটি সবার পক্ষে সম্ভব ছিলনা । সেই চাওয়াকে সহজ করে দিয়েছে উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি। এখন হাত বাড়ালেই মিলছে বই, এখানে এসে বইপড়ে আত্মার খোরাক মেটানো যায় নিমিষেই।
পাঠাগারের সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, এই পাঠাগার না হলে একসাথে আমাদের এতো বইয়ের সমাহার দেখার সুযোগ হতোনা। পাঠাগার হওয়ার আগে আমরা এখানে পাঠ্যবই ছাড়া ভিন্ন কোনো বই পড়ার সুযোগ পাইনি।
আছে বিপুল সমাহার:
পাঠাগারটিতে এখস বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। সংগ্রহকৃত বইয়ের মধ্যে অধিকাংশ অথেনটিক বই।
বর্তমানে পাঠাগারে দর্শন, ইতিহাস, ধর্মীয়, মনোবিজ্ঞান, কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ গন্থ, উপন্যাস, ছোটগল্প, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, ঐতিহ্য, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা-জ্ঞান, গবেষণা, অনুবাদ সাহিত্য, অর্থনীতি বিষয়ক ৯ হাজার বই রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও মনীষীদের গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের সংগ্রহও পাঠাগারে রয়েছে।
স্বপ্নের ডানা মেলে যে আঙিনায়:
একটি গ্রন্থাগার শুধু বইপাঠে সীমাবদ্ধ থাকেনা। বইপাঠের পাশাপাশি পাঠককে আলো দেখায়, স্বপ্ন দেখায়, আগামীর পথ দেখায়, ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখায়। অতীতের সাথে বর্তমানের সেতুবন্ধন তৈরি করে দেয়। পাঠাগারের পাঠকরা এখানে বইপাঠের মধ্যদিয়ে নিজেদের জীবন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ভাবতে শুরু করে। তারা পড়ালেখার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সুন্দর ভবিষ্যত বুনতে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন।
পাঠাগারের সদস্য সুমাইয়া আকতার জানান, এখানে বইপড়ার পর আমাদের ভাবনায় নতুন চিন্তাশক্তি যুক্ত হয়, নতুন ভাবনার সূচনা হয়, একেকটি বইপড়ার পরে মনে হয় আমরা নতুন একটি ডানামেলে উড়তে শিখছি। এই পাঠক আরও জানান, গ্রন্থাগারের মতো বিশাল জ্ঞানরাজ্যে প্রবেশ না করলে হয়তো এমন স্বপ্ন দেখা সম্ভব হতোনা। এখানকার পাঠকের জন্য পাঠাগারটি যেনো স্বপ্নের ডানা মেলার এক বটবৃক্ষ।
শক্তি যুগিয়েছে নারীরা:
এই পাঠাগারের অধিকাংশ পাঠক নারী। শুরু থেকে নারী পাঠকদের আধিক্য ছিল পাঠাগারে। যার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান।। প্রান্তিক জনপদের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে ‘পাছে লোকে কি বলে’ সেই ভয়কে পেছনে ফেলে নারীরা পাঠাগারমুখী হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নারী পাঠকরা পুরো লাইব্রেরী আঙিনাকে মুখরিত করে রেখেছে। তাদের পদচারনায় একটি পাঠকমুখী পাঠাগারে রূপ নেয় গ্রন্থাগারটি। তারা প্রতিদিন পাঠকরুমকে সচল রেখেছে। বর্ষা কিংবা খরা রোদের অসহ্য তাপমাত্রাকে পেছনে ফেলে নিয়মিত লাইব্রেরীতে এসে বইপাঠে যুক্ত থাকেন। দৈনিক ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ জন নারী পাঠকের উপস্থিতি ঘটে পাঠগারে। নারী পাঠকের নিয়মিত পদচারণার ফলে এখন উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরীকে সবাই নারী জাগরণের বাতিঘর হিসেবে অভিহিত করে।
নারী পাঠকরা এখন অনেক সাহসী এবং প্রতিবাদী:
শুরুতেই যখন লাইব্রেরিতে নারী পাঠকরা আসা শুরু করেন, তখন তারা নানা কটূক্তির সম্মুখীন হন। তারা এগুলোকে মোকাবেলা করতে শিখেন, সাহসের ভুমিকা রেখে প্রতিবাদীর ভুমিকা রাখেন। একসময় এসব কটূক্তি বন্ধ হয়ে যায়, এলাকার মানুষ বুঝতে পারে বহুমুখী জ্ঞানার্জনের জন্য পাঠাগারের বিকল্প নেই। পাঠাগার-ই পারে একটি জ্ঞানবান্ধব জাতি উপহার দিতে। পাঠগারের গ্রন্থাগারিক কলি আকতার জানান, কারো কালো চক্ষু কিংবা কটূক্তিতে কোনো পাঠক যেনো হতাশায় না ভোগেন , সেই বিষয়গুলো নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করে পাঠকের মনে লুকিয়ে থাকা ভয়গুলো ভেঙে দিয়েছি আমরা। মনের সংকোচগুলো দুর করতে অসীম সাহসের বাণী শুনিয়েছি। সমাজের অন্ধ কূসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব প্রকাশের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছি। আমাদের নিয়মিত কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে একসময় নারী পাঠকদের মনোবল দৃঢ় হয়। তারা রীতিমত সাহসী হয়ে ওঠেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।
দরকার একটি টেকসই ভবন:
বর্তমানে পাঠাগারটির অবকাঠামো খুবই দুর্বল। প্রতিবছর বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে পাঠাগারটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় হামুন’র তান্ডবে পাঠাগারটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়, ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবর ফলে প্রায় ১ মাস খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে বই ও আসবাবপত্র।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, পাঠাগারের বর্তমান অবকাঠামো অনেকটা দুর্বল। কিন্তু পাঠাগারের সংগ্রহে থাকা হাজারো দুর্লভ বই, গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী, আসবাবপত্র ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য আমাদের শক্তিশালী কোনো অবকাঠামো নাই। তিনি জানান, সাগরে যখন ঘূর্ণিঝড়ের সূত্রপাত হয়, তখন আমাদেরকে ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হয়। আমরা ঘূর্ণিঝড়ে এতগুলো বই আর আসবাবপত্র কোথাও সরিয়ে নিতে পারিনা। তিনি আরও জানান, যেহেতু এটি একটি দুর্যোগ ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা বছরের প্রায় সময় এখানে ঘূর্ণিঝড় আঘাতে হানে, আমাদের পাঠাগারের নিরাপত্তাবলয়ের জন্য একটি টেকসই ভবন দরকার। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানান, উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি সর্বসাধারণের জন্য একটি জ্ঞানের বাতিঘর। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ,পাঠাগারের জন্য একটি স্থায়ী ভবনের স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়েছে ৩ বার:
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঠাগারটি এ পর্যন্ত তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৪ সালে এক টর্নেডোর আঘাতে পাঠাগারটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানুর’ আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঠাগারটি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয় যায় সবকিছু। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পাঠাগারের পুরো চালা উড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায় প্রায় ২ হাজার বই। অনেকগুলো আসবাবপত্র ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে যায়। পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক মোবারকা বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে পাঠাগারটি পুনরায় গড়ে তুলতে তিন লাখ খরচ লেগেছে।
পাঠকদের কথা:
২০১৮ সাল থেকে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্য রেশমি। স্থানীয় নজরুল ইসলাম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ শ্রেণির বছর থেকে সে পাঠাগারের নিয়মিত সদস্য। এই শিক্ষার্থী জানান, আমি লাইব্রেরি সম্পর্কে কিছুই জানতামনা, আমার তেমন কোনো ধারণা ছিলনা। কিন্তু একদিন সহপাঠীদের সাথে এই পাঠাগারে প্রবেশ করার পর একসাথে হাজারো বই দেখে নিজের মধ্যে এক ধরণের অনুভূতি তৈরি হয়। সেই অনুভূতি থেকে আমি পাঠাগারের সদস্য হই এবং বইয়ের সাথে আমার একটি সাঁকো তৈরি হয়। রেশমি জানান ” এই পাঠাগার আমাকে পাঠক হতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং হাজারো বইয়ের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।
পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক নবম শ্রেণির ছাত্রী কানিছ ফাতেমা জানান, পাঠাগারটি সত্যিকার অর্থে অন্ধকারে আলোর প্রদীপ। কারণ এটির মাধ্যমে আমরা আলোর সন্ধান পেয়েছি। কানিছ ফাতেমা জানান” আমাদের এখানে পাঠ্যবই ছাড়া সহসা অন্যকোনো বইয়ের দেখা মেলতোনা, মানুষের মাঝে ঐ রুচিবোধও ছিলনা, এখানে দৈনিক পত্রিকা পড়া ছিল আকাশ কুসুম কল্পনা। এই পাঠাগারের ফলে আজ আমরা হাজারো বইয়ের দেখা পেয়েছি। ইচ্ছেমতো নিজের পছন্দের বইটি পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। বাড়িতেও বই নিয়ে যেতে পারি স্বাধীনভাবে। এখানে বসেই আমরা দৈনিক পত্রিকা পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। আমাদের পাঠাগারে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়।
পাঠাগারের আরেক সদস্য রফিক উদ্দিন জানান, আমরা প্রথমে পাঠাগারটির গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। শুরুতে আমাদের তেমন আগ্রহও ছিলনা। কিন্তু এখানে কয়েকদিন আসা শুরু করলাম, সমসাময়িক বিষয়ের উপর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করলাম, তখন গুণীজনদের বিভিন্ন বক্তব্য থেকে পাঠাগারের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করি। দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানান, আমরা অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম, পাঠাগারে এসে আমরা নতুন পৃথিবীর সন্ধান পেয়েছি। বই আমাদেরকে আলো দেখিয়েছে। বই যে সাঁকো তৈরি করে দেয়, সেটা এই পাঠাগারে এসে অনুভব উপলদ্ধি করতে পেরেছি।
স্থানীয়রা যা জানালেন:
খুদুকখালী গ্রামের কোনাখালী বাইতুল হক জামে মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী আমাদের এলাকার জন্য একটি আলোকিত বাতিঘর। গ্রামের সব শিক্ষার্থী , শিক্ষক ও বইপ্রেমী মানুষের জন্য এটি জ্ঞানার্জনের জন্য একটি নিরিবিলি প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও জানান, পাঠকের তুলনায় গ্রন্থাগারে এখনো বইয়ের সংখ্যা কম। তিনি আরো বলেন, অন্য দশটি গ্রন্থাগারের চেয়ে আমাদের গ্রন্থাগারে পাঠকের উপস্থিতি অনেক বেশি। তবে চাহিদার তুলনায় বই কম।
একই গ্রামের স্থানীয় স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ফরিদুল ইসলাম জানান, নিরিবিলি বইপাঠের জন্য উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এটি এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে।
ছনুয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য নার্গিস সোলতানা চৌধুরী জানান, এই পাঠাগারটি আমাদের ইউনিয়নের এক গর্বের প্রতিষ্ঠান। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বইমুখী করা, এলাকায় জ্ঞানের আলোর বিস্তার এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপক অবদান রাখছে।
স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তযিুদ্ধ কর্নার:
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি এক হাজার গ্রন্থাগারে স্থাপন করে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’। এরই ধারাবাহিকতায় প্রান্তিকের গণপাঠাগারটিতেও স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। এই কর্নারের মাধ্যমে উপকূল এলাকার হাজারো শিক্ষার্থী খুব সহজে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার সুযোগ লাভ করেছে।
অংশগ্রহণ করেছে শত গ্রন্থাগারের কর্মসূচীতে:
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রানালয় ও জাতীয় গ্রন্থাগারের তত্তাবধানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘মুজিবশতবর্ষে শত গ্রন্থাগারে পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই সোনার মানুষ হই’ শীর্ষক কর্মসূচীতে সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছে উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরী। এই কর্মসূচীতে লাইব্রেরীর ১০ জন সদস্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে পাঠাগারটি চট্টগ্রাম বিভাগে গ বিভাগে প্রথমস্থান অধিকার করে।
এগিয়ে যেতে চায় বহুদূর:
উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি আগামীতে শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বহুমুখী জ্ঞানচর্চাকে বহুদূর এগিয়ে নিতে চায় পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা সাঈফী আনোয়ারুল আজীমের সাথে কথা বলে একটি দুরদর্শী পরিকল্পনার কথা জানা যায়। তিনি জানান, পাঠাগার নিয়ে আমাদের সুদূর পরিকল্পনা আছে, আছে বিশাল লক্ষ্য। পাঠাগারটি একদিন সত্যিকার অর্থে বহুমুখী জ্ঞানের চারণক্ষেত্র হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও জানান, আমরা চাওয়া হলেঅ, পাঠাগারটি যুগযুগ ধরে উপকূলবাসীর মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াতে থাকুক। পাঠাগারটি নিয়ে আমাদের স্বপ্ন আছে,অঙ্গীকার আছে, সুন্দর পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সুন্দর মানসিকতার কিছু মানুষের প্রয়োজন, কিছু গুণীজনের প্রয়োজন, যাদের সমর্থন আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
সাঈফী আনোয়ারুল আজীম জানান, আমাদের উদ্যোগে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সাড়া দেওয়া দরকার। সচল গণপাঠাগার সমূহকে কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া সরকারের একান্ত দায়িত্ব। এই মুহুর্তে, আমরা গ্রন্থাগারের সব সেক্টরে উদ্ভাবনী নতুন কিছু সংযোজন করার দৌঁড়ে আছি। আমাদের অধ্যবসায় যেনো আমাদেরকে একটি কাঙ্কিত সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারে, সেই মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা এমন অর্জনের জন্য সংগ্রাম করছি যা আমাদের গ্রন্থাগারকে জ্ঞান চর্চায় সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।
এক নজরে উপকূলীয় পাবলিক লাইব্রেরি:
২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের খুদুকখালী গ্রামে প্রতিষ্ঠা লাভ পাঠাগারটি। ২০১৭ সালে এটি গণগ্রন্থাগার অধিদফতর থেকে নিবন্ধন লাভ করে। নিবন্ধন নং চট্ট/৪৫/১৭. প্রথমে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরুর পর ২০১৭ সালে পাঠাগারের নামে ক্রয়কৃত নিজস্ব ভুমিতে হস্তান্তর হয়। পাঠাগারের ক্রয় করা হয় ২২ শতক জমি। বর্তমানে পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা ৯ হাজারের কাছাকাছি। স্টাফ কর্মকর্তা ৪ জন। পাঠাগারের নিবন্ধিত সদস্য ২ শতাধিক। দেশের শিক্ষানুরাগী মানুষের দেওয়া আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাঠাগারটি পরিচালিত হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী , সংগঠক সাঈফী আনোয়ারুল আজীম পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন।
Copyright © 2024 II Design By : F.A.CREATIVE FIRM Ltd.